1. dailyainerkantho@gmail.com : admin :
বাংলাদেশ তুমি কার? উর্দুভাষী বিহারি বাদে সবার! - journalstate
২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১০ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| শীতকাল| বৃহস্পতিবার| বিকাল ৫:৪৭|
শিরোনামঃ
জুলাই স্পিরিটকে সমুন্নত রাখাই হোক ডাকসু নেতৃত্বের প্রধান কাজ। ভোলা-২ আসনে ধানের শীষ প্রত্যাশী ছাত্রদলের মৃত্যুঞ্জয়ী ও একাধিকবারের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ ওয়ালিউদিন অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম ও এমডি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুর গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ধানের শীষের পক্ষে একত্রিত হতে হবে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার শিশুদের সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন পিরোজপুর-২ আসনে ধানের শীষ প্রত্যাশী ছাত্রনেতা থেকে তরুণ আইনজীবী নেতা মোঃ মাহবুবুর রহমান সিকদার বাংলাদেশ তুমি কার? উর্দুভাষী বিহারি বাদে সবার! ধ্বংসের পথে দেশের সবচেয়ে বড় ও মূল্যবান ওয়াকফ এস্টেট। রক্ষার্থে নিবেদিতপ্রাণ নবাব সলিমুল্লাহ’র বংশধর খাজা ইকবাল আহসানুল্লাহ এনসিপির জনসমর্থন বাড়ছে বিদ্যুৎ গতিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন ইঞ্জিনিয়ার জিয়া

বাংলাদেশ তুমি কার? উর্দুভাষী বিহারি বাদে সবার!

সাইফুল ইসলাম শুভ
  • Update Time : শনিবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫,
  • 427 Time View
Oplus_131072

পৃথিবীতে বহু নির্যাতিত-নিপীড়িত- নিষ্পেষিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী রয়েছে, কিন্তু সেই তালিকায় বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারিদের দ্বিতীয় স্থানে রাখার সুযোগ নেই! ভারতবর্ষের বুকে তারাই হয়তো একমাত্র জাতি যাদের একসময় মর্যাদাপূর্ণ জীবন, গৌরবময় উত্তরাধিকার ও সাংস্কৃতিক প্রাধান্য থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শুধুই মুসলিম স্বাতন্ত্র্যচেতনা লালনের ফলে একাধিকবার ভয়ানক গণহত্যার শিকার হয়ে আজ তারা উপমহাদেশের তিন তিনটি দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসরত বিহারিদের সেসকল দাঙ্গার দুর্বিষহ স্মৃতি কতোটা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তা আমরা না জানলেও বাংলাদেশের নাগরিক বিহারিদের স্মৃতিপটে গণহত্যার ইতিহাস যে আজও তাজা তা আমরা হলফ করেই বলতে পারি। এদেশের বিহারি মুহাজিররা একবার হিন্দুদের হাতে নির্বিচারে-নৃশংসভাবে গণহত্যার শিকার হয়েছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষে ১৯৪৬ সালে, ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার ঠিক প্রাক্কালে শুধুই পরিপূর্ণভাবে মুসলমান হওয়ার কারণে, আরেকবার হিন্দুস্তানের মদদপুষ্ট কিছু বিপথগামী বাঙালিদের দ্বারা ১৯৭১ সালে ‘মুঘল সম্রাটের উত্তরাধিকার’ উর্দুভাষী বলে।

ইতিহাসের নির্মমতা এই তো, যে বাঙালি মুসলমানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের সংখ্যালঘু মুসলমানদের মতো বিহারিরাও নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করে ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ স্লোগান তুলে ‘মুসলমানদের দেশ’ পাকিস্তান বানালো, সেই পাকিস্তানেই তারা চিহ্নিত হয়েছিল ‘রিফিউজি’ হিসেবে এমনকি পূর্ব-পাকিস্তানে তো তাদের রক্তই ছিল সবচেয়ে সহজলভ্য, ঠিক যেন তুরুপের তাস! পাকিস্তানের শাসনক্ষমতার কর্তৃত্ব নিয়ে বাঙালিদের সঙ্গে পাঞ্জাবি ও সিন্ধিদের দ্বন্দ্বে এসকল ভারত প্রত্যাগত নিরীহ ও নিরস্ত্র মুহাজিরদেরকে ফেলা হয়েছিল ‘খরচার খাতায়!’ একাত্তরের ২৫ মার্চ পাক-বাহিনী তাদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাঙালি হত্যা শুরু করলেও, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বাঙালিদের দ্বারা ‘বিহারি কিলিংস’ শুরু হয়েছিল মার্চের শুরু থেকেই। আবার দীর্ঘ নয়মাসব্যাপী চলা সেই স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা পাক আর্মির আক্রমণের মুখে ততোটা প্রতিরোধ বা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে না পারলেও, যুদ্ধ শেষে পরাজিত ৯৩ হাজার পাকসেনার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে অপারগ হলেও, আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিরস্ত্র বিহারিদের হত্যায় ও তাদের সহায়-সম্পত্তি লুটে কোনো অংশেই কার্পণ্য করিনি। প্রখ্যাত নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের ‘স্বপ্নভূমি’ তথ্যচিত্রটি একাত্তরের সেই ভয়ানক বিহারি গণহত্যার এক অনন্য দলিল হয়ে আছে। আজও যেকোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সেটি দেখলেই মনের অজান্তে চোখের কোনে সহমর্মিতার পানি চলে আসে!

উপমহাদেশের মুসলমানদের একক ও অবিসংবাদিত নেতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর স্বীকৃতিতে, ছেচল্লিশের দাঙ্গায় প্রাণ হারানো প্রায় লক্ষাধিক বিহারি মুসলমানদের রক্ত দিয়েই অঙ্কিত হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানচিত্র। যদি ছেচল্লিশের দাঙ্গার পরে বিহারিরা জানতো যে, পূর্ব পাকিস্তানে আসলে তাদেরকে শুধু মুসলমান হলেই চলবে না বরং বাঙালিও হতে হবে, নয়তো প্রাণে মারা পড়বে তাহলে আমি নিশ্চিত যে, একজন বিহারিও সেদিন এদেশে মুহাজির হিসেবে আসতো না। তারা সেটা জানতো না, কারণ তখন আমরা শুধুই মুসলমান ছিলাম, বাঙালি হয়েছি পরবর্তীতে হিন্দুদের প্ররোচনায় উর্দুভাষীদেরকে হত্যার সময়ে। তারা বাঙালি মুসলমানদেরকে আপন ভাই ভেবে শতকের পর শতক যাবৎ কলকাতার দাদাবাবুদের খামারবাড়ি অনুন্নত-অবহেলিত পূর্ববঙ্গে আসায় পরবর্তীকালের পূর্ব পাকিস্তানে যে শিল্পোন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিল তাও শুরু হয়েছিল অবাঙালি উর্দুভাষীদের পুঁজি ও শ্রম দ্বারাই। বস্তুত, দেশভাগের আগে বাঙালি মুসলমানরা শুধু কৃষিকাজ ছাড়া আর কিছুই জানতো না। একটা দিয়াশলাইয়ের কাঠি পর্যন্ত আসতো কলকাতা থেকে। কিন্তু, আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙালিরা একথা স্বীকার করতেও প্রস্তুত নই যে, সেদিনের সেই বিহারি শ্রমিকদের হাত ধরেই আমরা শিখেছিলাম যতোসব কারিগরি ও প্রকৌশলের কাজ। ফলে একাত্তরের পরে তাদের অবর্তমানেও আমরা আরো কিছুকাল চালু রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম আমাদের গর্বের জগদ্বিখ্যাত সেসকল পাটকল, চিনিকল, কাগজকল প্রভৃতি। যেগুলোর অধিকাংশই স্বাধীন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক শাসকগোষ্ঠীর সুযোগ্য ব্যবস্থাপনায় বন্ধ হয়ে আজ অবধি বহাল রয়েছে, ফলে দেশটা আবারো সেই হিন্দুস্তানের বাজারে পরিণত হয়েছে। এগুলোই তো আমাদের মহান স্বাধীনতার সুফল! তাই নয় কি?

আমরা সচরাচর যে ভূখণ্ডের উত্তরাধিকার হিসেবে গর্বিত হই এবং ফিরে পেতে চাই, নবাব সিরাজুদ্দৌলার সেই বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার উত্তরাধিকার কিন্তু বিহারিদেরও রয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা দমিত না হলে হয়তো তাদের মধ্য থেকেও উঠে আসতো বরণীয়-স্মরণীয় কোনো জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। একাত্তরের পূর্বে গোটা মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে বিহারিদের একচ্ছত্র মালিকানা ও আধিপত্য থাকলেও, আজকে তাদের সম্বল তিন প্রজন্ম মিলিয়ে একসাথে ১২-১৫ জনের পরিবারের জন্য ক্যাম্পের একটা ছোট্ট ঝুপড়ি।

তাদের জীবনমান উন্নয়নের দিকে কোনো সরকারই নেকনজরে তাকায়নি। এদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণে ও সমস্যাগুলো সমাধানে না হয়েছিল কখনো সংসদে আলোচনা, না উঠে আসছে মূল ধারার গণমাধ্যমে আর না কখনো কোনো জাতীয় নেতাকে দেখা গেছে তাদের খোঁজ-খবর নিতে ক্যাম্পে। একথা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারিদের দমিয়ে রাখতে দেশের সকল সরকার, রাজনৈতিক দল, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও এনজিওগুলো পর্যন্ত সকলে একযোগে তৎপর, সবাই বিহারি ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ।
যেহেতু, রাজনৈতিক দলগুলোকে জনবান্ধব হতে হয় আর তারাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার বাহাদুর বনে যায়, সেহেতু তাদেরই উচিৎ বিহারিদের মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে কর্মসূচি প্রণয়ন করা। কিন্তু, এক্ষেত্রে তাদের গভীর অনীহা! বিশেষ করে তথাকথিত ইসলামী দলসমূহের। কেননা, ইসলামের খেদমত সহজ কিন্তু মুসলমানদের খেদমত করা বড়ই কঠিন!

বিগত বছরের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক ইনকিলাবে লিখেছিলাম ‘বিহারিরা কেমন আছে!’ শীর্ষক দু’টি কলাম। সেখানে আমি দেখিয়েছিলাম এই ভূখণ্ডে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করলেও তারা আজও কতোটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই রাষ্ট্র দ্বারা তারা কতোটা বঞ্চিত! যেহেতু এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও বিগত সব সরকারই বিহারিদের মৌলিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার নিয়ে বরাবরই উদাসীন থেকেছে, সেহেতু আজকের এই নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এতোটুকু প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি যে, এই সরকার এদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারীদের মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যে প্রক্রিয়ায়ই সংস্কারকাজ সাধিত হোক না কেন, বিহারি জনগোষ্ঠীর দাবীদাওয়া জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য পার্লামেন্টে তাদের জন্য কিছু সংরক্ষিত আসনের বন্দোবস্ত করবে। বিহারি শিশু-কিশোরদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া উর্দু স্কুলগুলো পুনরায় চালু করবে।

যেহেতু, দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী নিজ বাড়ি-ঘর থেকে বেদখল, সরকারি চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস/রেডক্রিসেন্ট স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী নিপিড়ীত-নির্যাতিত হয়ে চরমভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় কয়েক লক্ষ উর্দুভাষী জনগণ ক্যাম্পের দৈর্ঘ্যে ১০ ফুট ও ৮ ফুট প্রস্থের একেকটি ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে প্রায় ১২ জন সদস্যের একেকটি পরিবারকে। তাদের অনেককেই রাতে ঘুমাতে হয় পালাবদল করে, একজনের পরে আরেকজনকে। আমরা এই রাষ্ট্রে জন্মেছি, এদেশের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছি, শিক্ষা ও শ্রম দিয়েছি তবুও যুগের পর যুগ, দশকের পর দশক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছি। ২০০৮ সালে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রীট পিটিশনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসরত সকল উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং যারা জাতীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে ইচ্ছুক তাদেরকে অবিলম্বে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের এক ঐতিহাসিক রায় প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করেন। কিন্তু উর্দুভাষীরা নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার পেলেও মূল সমস্যা মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পূনর্বাসনসহ বিরাজমান অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় পিছিয়ে পড়া ভাষাগত সংখ্যালঘু উর্দুভাষী ক্যাম্পবাসীরা নিত্য-নতুন জটিল ও ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিগত ৫৪ বছরে অনেক সরকার আমরা দেখেছি কিন্তু কোনো সরকারই বিহারিদের মানবিক সংকট সমাধানে যথাযথ ও আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এখন এই নতুন বাংলাদেশে সময় এসেছে বাস্তবিক পরিবর্তনের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদিবাসী-উপজাতিসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে গেলেও ভাষাগত সংখ্যালঘু উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীদের মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসনসহ বিরাজমান অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো আলাপ-আলোচনা এখনো শুরুই করেনি। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে দেশের সার্বিক ও সর্বজনীন কল্যাণের জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জটিল ও কঠিন সমস্যাগুলোর সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং সকল রাজনীতিবিদদের নিকট উর্দুভাষীদের বিগত ৫৪ বছরের ঝুলন্ত সমস্যা তুলে ধরলে এই হতভাগা জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলো সমাধানের পথ সুগম হবে। কিন্তু এপর্যন্ত ঐকমত্য কমিশন কিংবা অন্যান্য সংস্কার কমিশনগুলোয় কেউই তাদের সমস্যাগুলো তুলে না ধরায় আমরা যারপরনাই মর্মাহত ও হতাশ হয়ে পড়ছি। কেননা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর নির্বাচিত সরকার বরাবরের মতো তখনও বিহারি সমস্যাটি ঝুলিয়ে রাখবে। অন্তত, আমাদের বেদনাবিধুর অভিজ্ঞতা তাই বলে।

সুতরাং, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাননীয় সভাপতি জনাব ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবের নিকট বিগত ৫৪ বছর থেকে ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষীদের মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসনসহ অন্যান্য বিরাজমান সমস্যাগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেশের রাজনীতিবিদদের নিকট তুলে ধরে সমাধান করার জন্য এদেশের ভাগ্য বিড়ম্বিত বিহারি জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সবিনয়ে নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরছি।

প্রস্তাবনাসমূহ :
১। রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসন ও নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন, সম্মানজনক বাসস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনায় রেখে এদেশের উর্দুভাষীরা যে যেসকল এলাকায় বসবাস করে আসছে আমাদেরকে সেই এলাকাগুলোতেই প্রতিটি পরিবারকে ০৩ (তিন) শতক জমি বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী পুনর্বাসনের কার্যক্রম যেন নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

২। তারা জন্মসূত্রে এদেশের নাগরিক হয়েও কখনোই মহান জাতীয় সংসদ কিংবা মন্ত্রিসভায় কোনো প্রতিনিধিত্বের সুযোগ লাভ করে নিজ জনগোষ্ঠীর ন্যায়সঙ্গত দাবী-দাওয়া জাতির সামনে এবং বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পারেনি। অথচ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই জটিল সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই মহান জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে কিংবা প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের ৪টি অঞ্চল (ঢাকা, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ) থেকে মোট ৪ জন উর্দুভাষী প্রতিনিধি সংসদ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব রাখছি।

৩। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর পূর্ণ নাগরিকত্ব, মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।
৪। উর্দুভাষী ক্যাম্পবাসীদের মর্যাদার পুর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের দেওয়া প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা যেমন, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বহাল রাখা এবং মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ক্যাম্প উচ্ছেদ এবং ক্যাম্পর আশে-পাশে দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে না মর্মে সরকারীভাবে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করছি।
৪। স্থানীয় ভূমিদস্যুদের কবল থেকে যেসকল বিহারি নেতৃবৃন্দ তাদের স্বজাতিকে রক্ষায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, সেসকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিগত পাঁচ আগস্টের পরবর্তীতে দায়ের হওয়া সকল মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রেফতারকৃতদের সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হোক।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবসহ সরকারের সকল অংশীজন ও রাজনৈতিক দলগুলোও এই যুগের পর যুগ ধরে ভোগান্তির শিকার এই বিহারি মুহাজিরদের সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিকভাবে কার্যকর ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে কী বিহারিরা একটুও আশাবাদী হতে পারে না?

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025